বাংলাদেশের জনগণের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি ও জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধির জন্য নিম্নলিখিত উপায়সমূহ অবলম্বন করা উচিত :
১. কৃষি উন্নয়ন :
আমাদের দেশের অধিকাংশ লোক কৃষির উপর নির্ভরশীল। কাজেই জনগণের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি করতে হলে কৃষিক্ষেত্রে আয় বৃদ্ধি করতে হবে। যান্ত্রিক চাষ পদ্ধতি প্রবর্তন, উত্তম বীজ ও সার প্রয়োগ, পানিসেচ ব্যবস্থার সম্প্রসারণ ইত্যাদি গ্রহণের মাধ্যমে কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে।
২. শিল্পের উন্নয়ন সাধন :
উন্নত দেশগুলোর ইতিহাস এ শিক্ষা দেয় যে, শিল্পের দ্রুত উন্নয়নের মাধ্যমেই তাদের বর্তমান উন্নত অবস্থা। সুতরাং আমাদেরকে কৃষির পাশাপাশি শিল্পক্ষেত্রে উন্নতি সাধন করতে হবে। এতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে, বেকারত্ব কমে যাবে, আয় বাড়বে এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে।
৩. শিক্ষা বিস্তার :
যেহেতু শিক্ষা ভিন্ন উন্নয়ন সম্ভব নয় তাই দেশে বাস্তবমুখী মৌলিক শিক্ষার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে। উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত হলে জনগণের মাথাপিছু আয় ও জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পাবে।
৪. প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার :
বাংলাদেশের প্রাপ্ত প্রাকৃতিক সম্পদের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে হবে।
৫. সুষ্ঠু ও বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা :
সুষ্ঠু গণমুখী ও বাস্তবধর্মী পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং এর সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে জনগণের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি তথা অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা সম্ভব।
৬. বেকার সমস্যার সমাধান:
দেশে কর্মসংস্থানের নানামুখী সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির মাধ্যমে সকল কর্মক্ষম লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করলে জনগণের অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে মাথাপিছু আয় ও জীবনযাত্রার মানের উন্নয়ন ঘটতো।
৭. শ্রমিকের দক্ষতা বৃদ্ধি :
বাংলাদেশের জনসাধারণের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্য শ্রমিকের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে।
৮. মূলধন গঠনের হার বৃদ্ধি :
আমাদের অভ্যন্তরীণ সঞ্চয় একত্রীকরণের মাধ্যমে মূলধন গঠনের হার বৃদ্ধি করতে হবে।
৯. জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বোধ :
সম্পদের তুলনায় বাংলাদেশে জনসংখ্যা যে ঊর্ধ্বগতিতে বাড়ছে, তা রোধ করা সম্ভব হলে মাথাপিছু সম্পদের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে, জনগণের জীবনযাত্রার মানের উন্নয়ন ঘটবে।
১০. দক্ষ উদ্যোক্তা সৃষ্টি :
দক্ষ উদ্যোক্তা সৃষ্টি করতে না পারলে শিল্পায়ন কখনো গতিশীল হবে না। এজন্য দক্ষ উদ্যোক্তা শ্রেণী গড়ে তোলা প্রয়োজন।
১১. জাতীয় আয়ের সুষম বণ্টন :
বাংলাদেশের জাতীয় আয়ের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করতে হবে। বর্তমানে দেশের সম্পদ মুষ্টিমেয় লোকের হাতে কেন্দ্রীভূত রয়েছে। ফলে অধিকাংশ লোক দারিদ্র্যসীমার নিচে জীনযাপন করছে।
১২. দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি রোধ :
বাংলাদেশের অন্যতম সমস্যা হলো দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি । এই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির হার রোধ করতে পারলে মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে।
১৩. মুদ্রাস্ফীতি :
মুদ্রাস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হলে অথবা দূর করা সম্ভব হলে জনগণের প্রকৃত আয় বৃদ্ধি পাবে। তখন মাথাপিছু আয় ও জীবনযাত্রার মানও বৃদ্ধি পাবে।
১৪. সম্পদের বণ্টন :
সম্পদের বণ্টন সুখম হলে, দেশের সকল জনগণের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পাবে, জীবনযাত্রার মান বাড়বে।
১৫. প্রাকৃতিক দুর্যোগ রোধ :
প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব হলে অথবা কমপক্ষে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হলে দেশে সম্পদের কম ক্ষতিসাধন হবে। এজন্য পূর্বেই সতর্ক হওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন।
১৬. আর্থসামাজিক কাঠামোর উন্নয়ন:
দেশের আর্থসামাজিক কাঠামোর উন্নয়ন সাধন করা হলে, উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত হবে। জনগণের আর্থিক অবস্থার উন্নয়ন সাধিত হবে।
১৭. রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা:
দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকলে উন্নয়ন কার্যক্রম, বিনিয়োগ ও উৎপাদন কার্যক্রম অবারিত হয়। ব্যবসায়-বাণিজ্যে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায়, শিল্পোৎপাদন বাধাগ্রস্ত হয় না। ফলে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পায়। উপর্যুক্ত ব্যবস্থাদি গ্রহণ করা সম্ভব হলে বর্তমান সমস্যার বহুলাংশে সমাধান করা সম্ভব হবে। তখন বাংলাদেশের জনগণের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পাবে এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে।
0 Comments